কবি-কাহিনী ১


কবি-কাহিনী   ১


প্রথম সর্গ

শুন কলপনা বালা, ছিল কোন কবি

বিজন কুটীর-তলে। ছেলেবেলা হোতে

তোমার অমৃত-পানে আছিল মজিয়া।

তোমার বীণার ধ্বনি ঘুমায়ে ঘুমায়ে

শুনিত, দেখিত কত সুখের স্বপন।

একাকী আপন মনে সরল শিশুটি

তোমারি কমল-বনে করিত গো খেলা,

কবি-কাহিনী ২


কবি-কাহিনী     ২


দ্বিতীয় সর্গ

   "এত কাল হে প্রকৃতি        করিনু তোমার সেবা,

             তবু কেন এ হৃদয় পূরিল না দেবি?

   এখনো বুকের মাঝে           রয়েছে দারুণ শূন্য,

             সে শূন্য কি এ জনমে পূরিবে না আর?

      মনের মন্দির মাঝে           প্রতিমা নাহিক যেন,

             শুধু এ আঁধার গৃহ রয়েছে পড়িয়া--

কবি-কাহিনী ৩


কবি-কাহিনী     ৩


তৃতীয় সর্গ

কত দেশ দেশান্তরে ভ্রমিল সে কবি!

তুষারস্তম্ভিত গিরি করিল লঙ্ঘন,

সুতীক্ষ্নকণ্টকময় অরণ্যের বুক

মাড়াইয়া গেল চলি রক্তময় পদে।

কিন্তু বিহঙ্গের গান, নির্ঝরের ধ্বনি,

পারে না জুড়াতে আর কবির হৃদয়।

কবি-কাহিনী ৪


কবি-কাহিনী     ৪


চতুর্থ সর্গ

"এ তবে স্বপন শুধু, বিম্বের মতন

আবার মিলায়ে গেল নিদ্রার সমুদ্রে!

সারারাত নিদ্রার করিনু আরাধনা--

যদি বা আইল নিদ্রা এ শ্রান্ত নয়নে,

মরীচিকা দেখাইয়া গেল গো মিলায়ে!

অনুবাদ-চর্চ্চা

অনুবাদ-চর্চ্চা

ভূমিকা   

এই অনুবাদচর্চ্চা বইখানিতে বিবিধ-বিষয়-ঘটিত বিবিধ ইংরেজি রচনারীতির বাক্যাবলী সংগ্রহ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে নানা রকমের প্রকাশভঙ্গির সঙ্গে ছাত্রদের যেন পরিচয় ঘটে। আমার বিশ্বাস যদি যথোচিত অধ্যবসায়ের সঙ্গে অন্তত দুই বৎসর কাল এই অনুবাদ প্রত্যনুবাদের পন্থা ধরে ভাষাব্যবহারের অভ্যাস ঘটানো যায় তা হলে ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই দখল জন্মানো সহজ হবে।



দুই সম্পূর্ণ বিভিন্ন ভাষার মধ্যে কথায় কথায় অনুবাদ চলতেই পারে না। ইংরেজি ও বাংলা দুই

অনুবাদ-চর্চ্চা


অনুবাদ-চর্চ্চা   

বাংলা হইতে ইংরাজি







বহুকাল পূর্ব্বে Rhodopis নামে একটি সুন্দরী বালিকা তাহার সঙ্গীদের সঙ্গে নীল নদের জলে স্নান করিতেছিল; এমন সময় হঠাৎ একটি ঈগল্‌ আকাশ হইতে দ্রুত নামিয়া তাহার ছোটো চটি জুতাজোড়ার একপাটি ছোঁ মারিয়া লইয়া মরুভূমির উপর দিয়া উড়িয়া গেল। মেয়েটি মনের খেদে বলিয়া উঠিল, "মাগো! আমার বিমাতা কী না জানি বলিবেন!" সেই মুহূর্ত্তেই অত্যন্ত রুষ্টমুখে তাহার বিমাতা স্বয়ং সেইখানে আসিলেন। তিনি বলিলেন, "চলিয়া এস। তুমি হুই কুম্ভকারের কাছ হইতে যে কলসী কিনিয়াছিলে, সেটা ফাটা; রাজার কাছে নালিশ করিতে যাইতে হইবে।" ঈজিপ্টের মহারাজ সে সময়ে মেম্ফিস-নামক প্রচীন নগরে তাঁহার

গোরা ১


গোরা   


শ্রাবণ মাসের সকালবেলায় মেঘ কাটিয়া গিয়া নির্মল রৌদ্রে কলিকাতার আকাশ ভরিয়া গিয়াছে। রাস্তায় গাড়িঘোড়ার বিরাম নাই, ফেরিওয়ালা অবিশ্রাম হাঁকিয়া চলিয়াছে, যাহারা আপিসে কালেজে আদালতে যাইবে তাহাদের জন্য বাসায় বাসায় মাছ-তরকারির চুপড়ি আসিয়াছে ও রান্নাঘরে উনান জ্বালাইবার

গোরা ২


গোরা   


বর্ষার সন্ধ্যায় আকাশের অন্ধকার যেন ভিজিয়া ভারী হইয়া পড়িয়াছে। বর্ণহীন বৈচিত্র৻হীন মেঘের নিঃশব্দ শাসনের নীচে কলিকাতা শহর একটা প্রকাণ্ড নিরানন্দ কুকুরের মতো লেজের মধ্যে মুখ গুঁজিয়া কুণ্ডলী পাকাইয়া চুপ করিয়া পড়িয়া আছে। কাল সন্ধ্যা হইতে টিপ টিপ

গোরা ৩


গোরা   


গোরা ও বিনয় ছাত হইতে নামিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় গোরার মা উপরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বিনয় তাঁহার পায়ের ধুলা লইয়া প্রণাম করিল।



গোরার মা আনন্দময়ীকে দেখিলে গোরার মা

গোরা ৪


গোরা   


মত হিসাবে একটা কথা যেমনতরো শুনিতে হয়, মানুষের উপর প্রয়োগ করিবার বেলায় সকল সময় তাহার সেই একান্ত নিশ্চিত ভাবটা থাকে না-- অন্তত বিনয়ের কাছে থাকে না, বিনয়ের

গোরা ৫


গোরা   


"ওগো, শুনছ? আমি তোমার পুজোর ঘরে ঢুকছি নে, ভয় নেই। আহ্নিক শেষ হলে একবার ও ঘরে যেয়ো-- তোমার সঙ্গে কথা আছে। দুজন নূতন সন্ন্যাসী যখন এসেছে তখন কিছুকাল তোমার আর দেখা পাব না জানি, সেইজন্যে বলতে এলুম। ভুলো না, একবার যেয়ো।"



এই বলিয়া আনন্দময়ী ঘরকরনার কাজে

গোরা ৬


গোরা   


আজ আহ্নিক ও স্নানাহার সারিয়া কৃষ্ণদয়াল অনেক দিন পরে আনন্দময়ীর ঘরের মেজের উপর নিজের কম্বলের আসনটি পাতিয়া সাবধানে চারি দিকের সমস্ত সংস্রব হইতে যেন বিবিক্ত হইয়া খাড়া হইয়া বসিলেন।



আনন্দময়ী কহিলেন, "ওগো, তুমি তো তপস্যা করছ, ঘরের কথা কিছু ভাব না, কিন্তু আমি যে

গোরা ৭


গোরা   


ভোরে উঠিয়া বিনয় দেখিল রাত্রির মধ্যেই আকাশ পরিষ্কার হইয়া গেছে। সকাল-বেলাকার আলোটি দুধের ছেলের হাসির মতো নির্মল হইয়া ফুটিয়াছে। দুই-একটা সাদা মেঘ নিতান্তই বিনা প্রয়োজনে আকাশে ভাসিয়া বেড়াইতেছে।



বারান্দায় দাঁড়াইয়া আর-একটি নির্মল প্রভাতের স্মৃতিতে যখন সে পুলকিত হইয়া উঠিতেছিল

গোরা ৮


গোরা   


এই একটা বাঁধ ভাঙিয়া যাইতেই বিনয়ের হৃদয়ের নূতন বন্যা আরো যেন উদ্দাম হইয়া উঠিল। আনন্দময়ীর ঘর হইতে বাহির হইয়া রাস্তা দিয়া সে যেন একেবারে উড়িয়া চলিল; মাটির স্পর্শে তাহার যেন পায়ে ঠেকিল না; তাহার ইচ্ছা করিতে লাগিল মনের যে কথাটা লইয়া সে এ-কয়দিন সংকোচে পীড়িত হইয়াছে

গোরা ৯


গোরা   


উপরে গাড়িবারান্দায় একটা টেবিলে শুভ্র কাপড় পাতা, টেবিল ঘেরিয়া চৌকি সাজানো। রেলিঙের বাহিরে কার্নিসের উপরে ছোটো ছোটো টবে পাতাবাহার এবং ফুলের গাছ। বারান্দার উপর হইতে রাস্তার ধারের শিরীষ ও কৃষ্ণচূড়া গাছের বর্ষা-জলধৌত পল্লবিত চিক্কণতা দেখা যাইতেছে।



সূর্য তখনো অস্ত যায় নাই; পশ্চিম আকাশ হইতে

গোরা ১০


গোরা   
১০

খুঞ্চের উপর জলখাবার ও চায়ের সরঞ্জাম সাজাইয়া চাকরের হাতে দিয়া সুচরিতা ছাতে আসিয়া বসিল এবং সেই মুহূর্তে বেহারার সঙ্গে গোরাও আসিয়া প্রবেশ করিল। সুদীর্ঘ শুভ্রকায় গোরার আকৃতি আয়তন ও সাজ দেখিয়া সকলেই বিস্মিত হইয়া উঠিল।



গোরার কপালে গঙ্গামৃত্তিকার ছাপ, পরনে মোটা

গোরা ১১


গোরা   
১১

সেদিন তর্কে গোরাকে অপদস্থ করিয়া সুচরিতার সম্মুখে নিজের জয়পতাকা তুলিয়া ধরিবার জন্য হারানের বিশেষ ইচ্ছা ছিল, গোড়ায় সুচরিতাও তাহার আশা করিয়াছিল। কিন্তু দৈবক্রমে ঠিক তার বিপরীত ঘটিল। ধর্মবিশ্বাস ও সামাজিক

গোরা ১২


গোরা   
১২

বিনয় ও গোরা পরেশের বাড়ি হইতে রাস্তায় বাহির হইলে বিনয় কহিল, "গোরা, একটু আস্তে আস্তে চলো ভাই-- তোমার পা দুটো আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো-- ওর চালটা একটু খাটো না করলে তোমার সঙ্গে যেতে আমরা হাঁপিয়ে পড়ি।"



গোরা কহিল, "আমি একলাই যেতে চাই, আমার

গোরা ১৩


গোরা   
১৩

মধ্যাহ্নে গোরার কাছে যাইবার জন্য বিনয়ের মন আবার চঞ্চল হইয়া উঠিল। বিনয় গোরার কাছে নিজেকে নত করিতে কোনোদিন সংকোচ বোধ করে নাই। কিন্তু নিজের অভিমান না থাকিলেও বন্ধুত্বের অভিমানকে ঠেকানো শক্ত। পরেশবাবুর কাছে ধরা দিয়া বিনয় গোরার প্রতি তাহার এতদিনকার নিষ্ঠায় একটু যেন খাটো হইয়াছে

গোরা ১৪


গোরা   
১৪

গোরা যখন মধ্যাহ্নে খাইতে বসিল, আনন্দময়ী আস্তে আস্তে কথা পাড়িলেন, "আজ সকালে বিনয় এসেছিল। তোমার সঙ্গে দেখা হয় নি?"



গোরা খাবার থালা হইতে মুখ না তুলিয়া কহিল, "হাঁ, হয়েছিল।"



আনন্দময়ী অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া

গোরা ১৫


গোরা   
১৫

রাত্রে গোরা বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া অন্ধকার ছাতের উপর বেড়াইতে লাগিল।



তাহার নিজের উপর রাগ হইল। রবিবারটা কেন সে এমন বৃথা কাটিতে দিল। ব্যক্তিবিশেষের প্রণয় লইয়া অন্য সমস্ত কাজ নষ্ট করিবার জন্য তো গোরা পৃথিবীতে আসে নাই। বিনয় যে পথে যাইতেছে সে পথ হইতে তাহাকে টানিয়া

গোরা ১৬


গোরা   
১৬

বরদাসুন্দরী কহিলেন, "তুমি সুচরিতার বিয়ে দেবে না নাকি?"



পরেশবাবু তাঁহার স্বাভাবিক শান্ত গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষণ পাকা দাড়িতে হাত বুলাইলেন-- তার পর মৃদুস্বরে কহিলেন, "পাত্র কোথায়?"



বরদাসুন্দরী কহিলেন, "কেন, পানুবাবুর সঙ্গে

গোরা ১৭


গোরা   
১৭

ঘণ্টা দুই-তিন নিদ্রার পর যখন গোরা ঘুম ভাঙিয়া পাশে চাহিয়া দেখিল বিনয় ঘুমাইতেছে তখন তাহার হৃদয় আনন্দে ভরিয়া উঠিল। স্বপ্নে একটা প্রিয় জিনিস হারাইয়া জাগিয়া উঠিয়া যখন দেখা যায় তাহা হারায় নাই তখন যেমন আরাম বোধ হয় গোরার সেইরূপ হইল। বিনয়কে ত্যাগ করিলে গোরার জীবনে যে

গোরা ১৮


গোরা   
১৮

বিনয় আনন্দময়ীর কথা কয়টি ভাবিতে ভাবিতে বাসায় গেল। আনন্দময়ীর মুখের একটি কথাও এপর্যন্ত বিনয়ের কাছে কোনোদিন উপেক্ষিত হয় নাই। সে রাত্রে তাহার মনের মধ্যে একটা ভার চাপিয়া রহিল।



পরদিন সকালে উঠিয়া সে যেন একটা মুক্তির ভাব অনুভব করিল। তাহার মনে হইল গোরার

গোরা ১৯


গোরা   
১৯

সকালবেলায় গোরা কাজ করিতেছিল। বিনয় খামকা আসিয়া অত্যন্ত খাপছাড়াভাবে কহিল, "সেদিন পরেশবাবুর মেয়েদের নিয়ে আমি সার্কাস দেখতে গিয়েছিলুম।"



গোরা লিখিতে লিখিতেই বলিল, "শুনেছি।"



বিনয় বিস্মিত হইয়া কহিল, "তুমি কার কাছে

গোরা ২০


গোরা   
২০

মহিম সেদিন গোরাকে কিছু না বলিয়া তাহার পরের দিন তাহার ঘরে গেলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন গোরাকে পুনর্বার রাজি করাইতে বিস্তর লড়ালড়ি করিতে হইবে। কিন্তু তিনি যেই আসিয়া বলিলেন যে বিনয় কাল বিকালে আসিয়া বিবাহ সম্বন্ধে পাকা কথা দিয়া গেছে ও পানপত্র সম্বন্ধে গোরার পরামর্শ জিজ্ঞাসা

গোরা ২১


গোরা   
২১

গোরা তাহার স্বাভাবিক দ্রুতগতি পরিত্যাগ করিয়া অন্যমনস্কভাবে ধীরে ধীরে বাড়ি চলিল। বাড়ি যাইবার সহজ পথ ছাড়িয়া সে অনেকটা ঘুরিয়া গঙ্গার ধারের রাস্তা ধরিল। তখন কলিকাতার গঙ্গা ও গঙ্গার ধার বণিক্‌-সভ্যতার লাভলোলুপ কুশ্রীতায় জলে স্থলে আক্রান্ত হইয়া তীরে রেলের লাইন ও নীরে ব্রিজের বেড়ি পরে নাই। তখনকার শীতসন্ধ্যায় নগরের

গোরা ২২


গোরা   
২২

গোলাপ ফুলের একটু ইতিহাস আছে।



কাল রাত্রে গোরা তো পরেশবাবুর বাড়ি হইতে চলিয়া আসিল, কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়িতে সেই অভিনয়ে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব লইয়া বিনয়কে বিস্তর কষ্ট পাইতে হইয়াছিল।



এই অভিনয়ে ললিতার যে কোনো উৎসাহ ছিল তাহা নহে, সে বরঞ্চ এ-সব ব্যাপার ভালোই

গোরা ২৩


গোরা   
২৩

অভিনয়ের অভ্যাস উপলক্ষে বিনয় প্রত্যহই আসে। সুচরিতা তাহার দিকে একবার চাহিয়া দেখে, তাহার পরে হাতের বইটার দিকে মন দেয় অথবা নিজের ঘরে চলিয়া যায়। বিনয়ের একলা আসার অসম্পূর্ণতা প্রত্যহই তাহাকে আঘাত করে, কিন্তু সে কোনো প্রশ্ন করে না। অথচ দিনের পর দিন এমনিভাবে যতই যাইতে লাগিল, গোরার বিরুদ্ধে সুচরিতার মনের একটা

গোরা ২৪


গোরা   
২৪

এইরূপ স্থির হইয়াছিল যে, ইংরেজ কবি ড্রাইডেনের রচিত সংগীত-বিষয়ক একটি কবিতা বিনয় ভাবব্যক্তির সহিত আবৃত্তি করিয়া যাইবে এবং মেয়েরা অভিনয়মঞ্চে উপযুক্ত সাজে সজ্জিত হইয়া কাব্যলিখিত ব্যাপারের মূক অভিনয় করিতে থাকিবে। এ ছাড়া মেয়েরাও ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি এবং গান প্রভৃতি করিবে।



বরদাসুন্দরী বিনয়কে অনেক ভরসা দিয়াছিলেন যে, তাহাকে তাঁহারা কোনোপ্রকারে তৈরি করিয়া

গোরা ২৫


গোরা   
২৫

রবিবার দিন সকালে আনন্দময়ী পান সাজিতেছিলেন, শশিমুখী তাঁহার পাশে বসিয়া সুপারি কাটিয়া স্তূপাকার করিতেছিল। এমন সময় বিনয় আসিয়া ঘরে প্রবেশ করিতেই শশিমুখী তাহার কোলের আঁচল হইতে সুপারি ফেলিয়া দিয়া তাড়াতাড়ি ঘর ছাড়িয়া পলাইয়া গেল। আনন্দময়ী একটুখানি মুচ্‌কিয়া হাসিলেন।



বিনয় সকলেরই সঙ্গে ভাব করিতে পারিত।

গোরা ২৬


গোরা   
২৬

গোরা যখন ভ্রমণে বাহির হইল তখন তাহার সঙ্গে অবিনাশ মতিলাল বসন্ত এবং রমাপতি এই চারজন সঙ্গী ছিল। কিন্তু গোরার নির্দয় উৎসাহের সঙ্গে তাহারা তাল রাখিতে পারিল না। অবিনাশ এবং বসন্ত অসুস্থ শরীরের ছুতা করিয়া চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই কলিকাতায় ফিরিয়া আসিল। নিতান্তই গোরার প্রতি

গোরা ২৭


গোরা   
২৭

ম্যাজিস্ট্রেট ব্রাউন্‌লো সাহেব দিবাবসানে নদীর ধারের রাস্তায় পদব্রজে বেড়াইতেছেন, সঙ্গে হারানবাবু রহিয়াছেন। কিছু দূরে গাড়িতে তাঁহার মেম পরেশবাবুর মেয়েদের লইয়া হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন।



ব্রাউন্‌লো সাহেব গার্ড্‌ন-পার্টিতে মাঝে মাঝে বাঙালি ভদ্রলোকদিগকে তাঁহার বাড়িতে নিমন্ত্রণ

গোরা ২৮


গোরা   
২৮

কোনোপ্রকার অপরাধ বিচার না করিয়া কেবলমাত্র গ্রামকে শাসন করিবার জন্য সাতচল্লিশ জন আসামিকে হাজতে দেওয়া হইয়াছে।



ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত সাক্ষাতের পর গোরা উকিলের সন্ধানে বাহির হইল। কোনো লোকের

গোরা ২৯


গোরা   
২৯

আজ ছোটোলাট আসিবেন বলিয়া ম্যাজিস্ট্রেট ঠিক সাড়ে দশটায় আদালতে আসিয়া বিচারকার্য সকাল-সকাল শেষ করিয়া ফেলিতে চেষ্টা করিলেন।



সাতকড়িবাবু ইস্কুলের ছাত্রদের পক্ষ লইয়া সেই উপলক্ষে তাঁহার বন্ধুকে বাঁচাইবার চেষ্টা করিলেন। তিনি গতিক দেখিয়া বুঝিয়াছিলেন

গোরা ৩০


গোরা   
৩০

ললিতাকে সঙ্গে লইয়া বিনয় পরেশবাবুর বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইল।



ললিতার সম্বন্ধে বিনয়ের মনের ভাবটা কী তাহা স্টীমারে উঠিবার পূর্বে পর্যন্ত বিনয় নিশ্চিত জানিত না। ললিতার সঙ্গে বিরোধেই তাহার মন ব্যাপৃত ছিল। কেমন করিয়া এই দুর্বশ মেয়েটির সঙ্গে কোনোমতে সন্ধিস্থাপন হইতে পারে

গোরা ৩১


গোরা   
৩১

বিনয় ও ললিতাকে দেখিবা মাত্র কোথা হইতে সতীশ ছুটিয়া আসিয়া তাহাদের দুইজনের মাঝখানে দাঁড়াইয়া উভয়ের হাত ধরিয়া কহিল, "কই, বড়দিদি এলেন না?"



বিনয় পকেট চাপড়াইয়া এবং চারি দিকে চাহিয়া কহিল, "বড়দিদি! তাই তো, কী হল! হারিয়ে

গোরা ৩২


গোরা   
৩২

বিনয় তখনই আনন্দময়ীর বাড়ির দিকে চলিল। লজ্জায় বেদনায় মিশিয়া মনের মধ্যে ভারি একটা পীড়ন চলিতেছিল। এতক্ষণ কেন সে মার কাছে যায় নাই! কী ভুলই করিয়াছিল! সে মনে করিয়াছিল তাহাকে ললিতার বিশেষ প্রয়োজন আছে। সব প্রয়োজন অতিক্রম করিয়া সে যে কলিকাতায় আসিয়াই আনন্দময়ীর কাছে

গোরা ৩৩


গোরা   
৩৩

বাড়ি আসিয়া অসময়ে ললিতাকে দেখিয়াই পরেশবাবু বুঝিতে পারিলেন তাঁহার এই উদ্দাম মেয়েটি অভূতপূর্বরূপে একটা-কিছু কাণ্ড বাধাইয়াছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তিনি তাহার মুখের দিকে চাহিতেই সে বলিয়া উঠিল, "বাবা, আমি চলে এসেছি। কোনোমতেই থাকতে পারলুম না।"



পরেশবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, "কেন, কী হয়েছে?" ললিতা কহিল, "গৌরবাবুকে

গোরা ৩৪


গোরা   
৩৪

পরদিনে বরদাসুন্দরী এবং তাঁহাদের দলের বাকি সকলে আসিয়া পৌঁছিলেন। হারানবাবু ললিতা সম্বন্ধে তাঁহার বিরক্তি সংবরণ করিতে না পারিয়া বাসায় না গিয়া ইঁহাদের সঙ্গে একেবারে পরেশবাবুর কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বরদাসুন্দরী ক্রোধে ও অভিমানে ললিতার দিকে না তাকাইয়া এবং তাহার সঙ্গে কোনো কথা না কহিয়া একেবারে তাঁহার ঘরে গিয়া প্রবেশ

গোরা ৩৫


গোরা   
৩৫

সেদিন ললিতার নিকট হইতে আসিয়া বিনয়ের মনের মধ্যে কাঁটার মতো একটা সংশয় কেবলই ফিরিয়া ফিরিয়া বিঁধিতে লাগিল। সে ভাবিতে লাগিল, "পরেশবাবুর বাড়িতে আমার যাওয়াটা কেহ ইচ্ছা করে বা না করে তাহা ঠিক না জানিয়া আমি গায়ে পড়িয়া সেখানে যাতায়াত করিতেছি। হয়তো সেটা উচিত নহে। হয়তো

গোরা ৩৬


গোরা   
৩৬

শশিমুখীর সঙ্গে বিনয়ের বিবাহ যেন একপ্রকার স্থির হইয়া গেছে এইভাবে মহিম এবং তাঁহার ঘরের লোকেরা চলিতেছিলেন। শশিমুখী তো বিনয়ের কাছেও আসিত না। শশিমুখীর মার সঙ্গে বিনয়ের পরিচয় ছিল না বলিলেই হয়। তিনি যে ঠিক লাজুক ছিলেন তাহা নহে, কিন্তু

গোরা ৩৭


গোরা   
৩৭

সুচরিতার মাসি হরিমোহিনীকে লইয়া পরেশের পরিবারে একটা গুরুতর অশান্তি উপস্থিত হইল। তাহা বিবৃত করিয়া বলিবার পূর্বে, হরিমোহিনী সুচরিতার কাছে নিজের যে পরিচয় দিয়াছিলেন তাহাই সংক্ষেপ করিয়া নীচে লেখা গেল--



আমি তোমার মায়ের চেয়ে দুই বছরের বড়ো ছিলাম। বাপের বাড়িতে আমাদের দুইজনের

গোরা ৩৮


গোরা   
৩৮

পরেশ বরদাসুন্দরীর অনুপস্থিতিকালে হরিমোহিনীকে আশ্রয় দিয়াছিলেন। ছাতের উপরকার নিভৃত ঘরে তাঁহাকে স্থান দিয়া যাহাতে তাঁহার আচার রক্ষা করিয়া চলার কোনো বিঘ্ন না ঘটে তাহার সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়া দিয়াছিলেন।



বরদাসুন্দরী ফিরিয়া আসিয়া তাঁহার ঘরকন্নার মধ্যে এই একটি অভাবনীয় প্রাদুর্ভাব দেখিয়া

গোরা ৩৯


গোরা   
৩৯

বরদাসুন্দরী তাঁহার ব্রাহ্মিকাবন্ধুদিগকে প্রায়ই নিমন্ত্রণ করিতে লাগিলেন। মাঝে মাঝে তাঁহাদের ছাদের উপরেই সভা হইত। হরিমোহিনী তাঁহার স্বাভাবিক গ্রাম্য সরলতার সহিত মেয়েদের আদর-অভ্যর্থনা করিতে চেষ্টা করিতেন, কিন্তু ইহারা যে তাঁহাকে অবজ্ঞা করে তাহা তাঁহার কাছে গোপন রহিল না। এমন-কি, হিন্দুদের সামাজিক আচার-ব্যবহার লইয়া তাঁহার সমক্ষেই বরদাসুন্দরী তীব্র সমালোচনা উত্থাপিত

গোরা ৪০


গোরা   
৪০

সুচরিতা নীচের ঘরে আসিয়া হারানবাবুর সম্মুখে দাঁড়াইল-- কহিল, "আপনার কী কথা আছে বলুন।"



হারানবাবু কহিলেন, "বসো।"



সুচরিতা বসিল না, স্থির দাঁড়াইয়া রহিল।

গোরা ৪১


গোরা   
৪১

একই সময়ে নিজের অন্তরের সঙ্গে, আবার নিজের বাহিরের সঙ্গে সুচরিতার যে সংগ্রাম বাধিয়া উঠিয়াছে তাহাতে তাহাকে ভীত করিয়া তুলিয়াছে। গোরার প্রতি তাহার যে মনের ভাব এতদিন তাহার অলক্ষ্যে বল পাইয়া উঠিয়াছিল এবং গোরার জেলে যাওয়ার পর হইতে যাহা তাহার নিজের কাছে সম্পূর্ণ সুস্পষ্ট এবং

গোরা ৪২


গোরা   
৪২

পরদিন প্রাতে হরিমোহিনী ভূমিষ্ঠ হইয়া পরেশকে প্রণাম করিতেই তিনি ব্যস্ত হইয়া সরিয়া গিয়া কহিলেন, "করেন কী?"



হরিমোহিনী অশ্রুনেত্রে কহিলেন, "তোমাদের ঋণ আমি কোনো জন্মে শোধ করতে পারব না। আমার মতো এত বড়ো নিরুপায়ের তুমি উপায় করে দিয়েছ, এ তুমি ভিন্ন আর কেহ করতে পারত না। ইচ্ছা করলেও আমার ভালো কেউ

গোরা ৪৩


গোরা   
৪৩

পরেশবাবুর বাসার কাছেই সর্বদা তাঁহার তত্ত্বাবধানে থাকিয়া বাস করিতে পাইবে এই কথা শুনিয়া সুচরিতা অত্যন্ত আরামবোধ করিয়াছিল। কিন্তু যখন তাহার নূতন বাড়ির গৃহসজ্জা সমাপ্ত এবং সেখানে উঠিয়া যাইবার সময় নিকটবর্তী হইল তখন সুচরিতার বুকের ভিতর যেন টানিয়া ধরিতে লাগিল। কাছে থাকা না-থাকা লইয়া কথা নয়, কিন্তু জীবনের সঙ্গে

গোরা ৪৪


গোরা   
৪৪

হারানবাবু রণক্ষেত্রে প্রবেশ করিলেন।



আজ প্রায় পনেরো দিন হইয়া গিয়াছে ললিতা স্টীমারে করিয়া বিনয়ের সঙ্গে আসিয়াছে। কথাটা দুই-এক জনের কানে গিয়াছে এবং অল্পে অল্পে ব্যাপ্ত হইবারও চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু সম্প্রতি দুই দিনের মধ্যেই এই সংবাদ শুকনো খড়ে আগুন লাগার মতো ছড়াইয়া পড়িয়াছে।

গোরা ৪৫


গোরা   
৪৫

বিনয় যেখানে এই কয়দিন অতিথিরূপে ও বন্ধুরূপে এমন নিশ্চিতভাবে পদার্পণ করিয়াছিল তাহার তলদেশে সামাজিক আগ্নেয়গিরি এমন সচেষ্টভাবে উত্তপ্ত হইয়া আছে তাহা সে স্বপ্নেও জানিত না। প্রথম যখন সে পরেশবাবুর পরিবারের সঙ্গে মিশিতেছিল তখন তাহার মনে যথেষ্ট সংকোচ ছিল; কোথায় কতদূর পর্যন্ত তাহার অধিকারের সীমা তাহা সে নিশ্চিত

গোরা ৪৬


গোরা   
৪৬

ললিতা পরেশবাবুকে আসিয়া কহিল, "আমরা ব্রাহ্ম বলে কোনো হিন্দু মেয়ে আমাদের কাছে পড়তে আসতে চায় না-- তাই মনে করছি হিন্দুসমাজের কাউকে এর মধ্যে রাখলে কাজের সুবিধা হবে। কী বল বাবা?"



পরেশবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, "হিন্দুসমাজের কাউকে পাবে কোথায়?"

গোরা ৪৭


গোরা   
৪৭

চারি দিন পরে একখানি চিঠি হাতে করিয়া হারানবাবু বরদাসুন্দরীর কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। আজকাল পরেশবাবুর আশা তিনি একেবারেই পরিত্যাগ করিয়াছেন।



হারানবাবু চিঠিখানি বরদাসুন্দরীর হাতে দিয়া কহিলেন, "আমি প্রথম হতেই আপনাদের

গোরা ৪৮


গোরা   
৪৮

সুচরিতা ভাবিতে লাগিল ললিতা এ কী কাণ্ড বাধাইয়া বসিল। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া ললিতার গলা ধরিয়া কহিল, "আমার কিন্তু ভাই ভয় হচ্ছে।"



ললিতা জিজ্ঞাসা করিল, "কিসের ভয়?"



সুচরিতা কহিল, "ব্রাহ্মসমাজে তো চারি দিকে

গোরা ৪৯


গোরা   
৪৯

আনন্দময়ীর বাড়ি হইতে রোজ সকালবেলায় বিনয় একবার বাসায় আসিত। আজ সকালে আসিয়া সে একখানা চিঠি পাইল। চিঠিতে কাহারো নাম নাই। ললিতাকে বিবাহ করিলে বিনয়ের পক্ষে কোনোমতেই তাহা সুখের হইতে পারে না এবং ললিতার পক্ষে তাহা অমঙ্গলের কারণ হইবে এই কথা লইয়া চিঠিতে দীর্ঘ

গোরা ৫০


গোরা   
৫০

যখন বিনয়ের বাসায় হারানবাবুর আবির্ভাব হইয়াছে সেই সময়েই অবিনাশ আনন্দময়ীর কাছে গিয়া খবর দিয়াছে যে, বিনয়ের সঙ্গে ললিতার বিবাহ স্থির হইয়া গেছে।



আনন্দময়ী কহিলেন, "এ কথা কখনোই সত্য

গোরা ৫১


গোরা   
৫১

সুচরিতা হঠাৎ আনন্দময়ীকে দেখিয়া আশ্চর্য হইয়া কহিল, "আমি যে এখনই আপনার ওখানে যাব বলে প্রস্তুত হচ্ছিলুম।"



আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, "তুমি যে প্রস্তুত হচ্ছিলে তা আমি জানতুম না, কিন্তু যেজন্যে প্রস্তুত হচ্ছিলে সেই খবরটা পেয়ে আমি থাকতে

গোরা ৫২


গোরা   
৫২

পরেশবাবু কহিলেন, "বিনয়, তুমি ললিতাকে একটা সংকট থেকে উদ্ধার করবার জন্যে একটা দুঃসাহসিক কাজ করবে এরকম আমি ইচ্ছা করি নে। সমাজের আলোচনার বেশি মূল্য নেই, আজ যা নিয়ে গোলমাল চলছে দুদিন বাদে তা কারো মনেও থাকবে না।"



ললিতার প্রতি কর্তব্য করিবার জন্যই যে বিনয়

গোরা ৫৩


গোরা   
৫৩

গোরা জেল হইতে বাহির হইয়াই দেখিল পরেশবাবু এবং বিনয় দ্বারের বাহিরে তাহার জন্য অপেক্ষা করিতেছেন।



এক মাস কিছু দীর্ঘকাল নহে। এক মাসের চেয়ে বেশিদিন গোরা আত্মীয়বন্ধুদের নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া ভ্রমণ করিয়াছে, কিন্তু জেলের এক মাস বিচ্ছেদ হইতে বাহির হইয়াই সে যখন

গোরা ৫৪


গোরা   
৫৪

গোরার মন তখন ভাবে আবিষ্ট ছিল--সুচরিতাকে সে তখন একটি ব্যক্তিবিশেষ বলিয়া দেখিতেছিল না, তাহাকে একটি ভাব বলিয়া দেখিতেছিল। ভারতের নারীপ্রকৃতি সুচরিতা-মূর্তিতে তাহার সম্মুখে প্রকাশিত হইল। ভারতের গৃহকে পূণ্যে সৌন্দর্যে ও প্রেমে মধুর ও পবিত্র করিবার জন্যই ইঁহার আবির্ভাব। যে লক্ষ্ণী

গোরা ৫৫


গোরা   
৫৫

ললিতার সঙ্গে তাহার বিবাহ-প্রসঙ্গ আলোচনা করিবার জন্যই যে সুচরিতা বিনয়কে ডাকিয়া গেল, বিনয় তাহা বুঝিয়াছিল। এই প্রস্তাবটিকে সে শেষ করিয়া দিয়াছে বলিয়াই তো ব্যাপারটা শেষ হইয়া যায় নাই। তাহার যতক্ষণ আয়ু আছে ততক্ষণ কোনো পক্ষের নিষ্কৃতি থাকিতে পারে না।



এতদিন বিনয়ের সকলের চেয়ে বড়ো ভাবনা ছিল, গোরাকে আঘাত দিব কী করিয়া। গোরা

গোরা ৫৬


গোরা   
৫৬

হারানবাবুকে যখন বরদাসুন্দরী ডাকিয়া সকল কথা বলিলেন তখন তিনি কিছুক্ষণ গম্ভীর হইয়া বসিয়া রহিলেন এবং কহিলেন, "এ সম্বন্ধে একবার ললিতার সঙ্গে আলোচনা করে দেখা কর্তব্য।"



ললিতা আসিলে হারানবাবু তাঁহার গাম্ভীর্যের মাত্রা শেষ সপ্তক পর্যন্ত চড়াইয়া কহিলেন, "দেখো ললিতা, তোমার জীবনে খুব একটা দায়িত্বের সময় এসে উপস্থিত হয়েছে। এক দিকে

গোরা ৫৭


গোরা   
৫৭

অপরাহ্নে সুচরিতা পরেশবাবুর কাছে যাইবে বলিয়া প্রস্তুত হইতেছিল এমন সময় বেহারা আসিয়া খবর দিল একজন বাবু আসিয়াছেন।



"কে বাবু? বিনয়বাবু?"



বেহারা কহিল, "না, খুব গৌরবর্ণ, লম্বা একটি বাবু।"



সুচরিতা চমকিয়া উঠিয়া কহিল, "বাবুকে

গোরা ৫৮


গোরা   
৫৮

বিনয় আনন্দময়ীকে কহিল, "দেখো মা, আমি তোমাকে সত্য বলছি, যতবার আমি ঠাকুরকে প্রণাম করেছি আমার মনের ভিতরে কেমন লজ্জা বোধ হয়েছে। সে লজ্জা আমি চেপে দিয়েছি--উল্‌্‌টে আরো ঠাকুরপূজার পক্ষ নিয়ে ভালো ভালো প্রবন্ধ লিখেছি। কিন্তু সত্য

গোরা ৫৯


গোরা   
৫৯

পরেশবাবু উপাসনার পর তাঁহার ঘরের সম্মুখের বারান্দায় স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ছিলেন। সূর্য সদ্য অস্ত গিয়াছে।



এমন সময় ললিতাকে সঙ্গে লইয়া বিনয় সেখানে প্রবেশ করিল ও ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিয়া পরেশের পদধূলি লইল।



পরেশ উভয়কে এভাবে প্রবেশ করিতে দেখিয়া কিছু বিস্মিত হইলেন। কাছে বসিতে দিবার

গোরা ৬০

গোরা 
৬০

গোরা যে আজ আসিবে সুচরিতা তাহা নিশ্চয় জানিত। ভোরবেলা হইতে তাহার বুকের ভিতরটা কাঁপিয়া উঠিতেছিল। সুচরিতার মনে গোরার আগমন-প্রত্যাশার আনন্দের সঙ্গে যেন একটা ভয় জড়িত ছিল। কেননা গোরা তাহাকে যে দিকে টানিতেছিল এবং আশৈশব তাহার জীবন আপনার শিকড় ও সমস্ত ডালপালা লইয়া যে

গোরা ৬১

গোরা
৬১

আজ সকাল হইতে গোরার ঘরে খুব একটা আন্দোলন উঠিয়াছে। প্রথমে মহিম তাঁহার হুঁকা টানিতে টানিতে আসিয়া গোরাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "তা হলে, এতদিন পরে বিনয় শিকলি কাটল বুঝি?"



গোরা কথাটা বুঝিতে পারিল না, মহিমের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। মহিম কহিলেন, "আমাদের কাছে আর ভাঁড়িয়ে কী হবে বল? তোমার বন্ধুর

গোরা ৬২

গোরা 
৬২

হরিমোহিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, "রাধারানী, কাল রাত্রে তুমি কিছু খেলে না কেন?"



সুচরিতা বিস্মিত হইয়া কহিল, " কেন, খেয়েছি বৈকি।"



হরিমোহিনী তাহার ঢাকা খাবার দেখাইয়া কহিলেন, "কোথায় খেয়েছ? ঐ-যে পড়ে রয়েছে।"



তখন সুচরিতা বুঝিল, কাল খাবার কথা তাহার মনেই ছিল না।



হরিমোহিনী রুক্ষ স্বরে কহিলেন, "এ-সব তো ভালো কথা নয়। আমি তোমাদের পরেশবাবুকে যতদূর জানি, তিনি যে এতদূর সব বাড়াবাড়ি